রবিবার, ১৬ জুন, ২০১৩

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি থাকছে না ?



গত ১০-১০-২০১২ তারিখের দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-১০-২০১২ তারিখের দৈনিক আমার দেশ ও ১৭-১০-২০১২ তারিখের নয়া দিগন্তে এবং বিভিন্ন সম্পাদকীয়তে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ঢাকার এনসিটিবিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালার বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয় যে, আগামী ২০১৩ সাল থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে; সেখানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি থাকছে না।

সে সময় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি বাদ দেয়ার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশবাসীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ আসতে থাকে। প্রতিবাদের মুখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব ব্রজগোপাল ভৌমিকের পক্ষ থেকে ‘এ ধরনের অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে’ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। (দৈনিক সমকাল, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ৬)। একই তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সচিবের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, ‘বর্তমানে মানবিক শাখায় নৈর্বাচনিক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ইসলামের ইতিহাস, ইসলামশিক্ষা ও আরবি অন্তর্ভুক্ত আছে।’ (সমকাল, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ৬)। দৈনিক ইনকিলাবেও সচিব ব্রজ গোপাল ভৌমিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ইসলামশিক্ষা বিষয় চালু আছে। এখানে ইসলামশিক্ষাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই আসে না বরং ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণতায় প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার নিমিত্তে পাঠ্যক্রম রচনা করা হয়েছে।’ (দৈনিক ইনকিলাব, ১৭-১০-২০১২, পৃ: ১২)।

শিক্ষানীতি ২০১০-এর প্রাক-কথনের শেষ প্যারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেনÑ ‘এই শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।’ (দ্র: শিক্ষানীতি ২০১০, প্রাক-কথনের শেষ প্যারা)। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে মনে হয়েছে, ধর্মশিক্ষার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আন্তরিক।

সেই তাগিদের অলোকেই দেখা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ ঢাকার এনসিটিবির শিক্ষা কারিকুলামে উল্লেখ ছিল, মানবিক শাখার আবশ্যিক বিষয়ের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টিও ছিল। এমনকি ১৩-১২-২০১২ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর উন্নয়নমূলক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুমোদনের সভায়ও’ মানবিক শাখায় বিষয়ভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় এবং ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি রাখা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চূড়ান্ত বিজ্ঞাপন থেকে তা বাদ দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে গত ১৯-৫-২০১৩ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে বিষয় কাঠামো প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি দেখে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, এনসিটিবি তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক মানবিক শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে না রেখে কেবল ঐচ্ছিক বিষয় (চতুর্থ বিষয়) হিসেবে রাখা হয়েছে। ইতঃপূর্বে এনসিটিবির পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যেখানে প্রকাশ করা হয়েছিল যে, উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে থাকবে, কিন্তু কোনো রহস্যজনক কারণে অন্য সব বিষয় থাকলেও কেবল ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি এনসিটিবির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ১৯-৫-২০১৩ তারিখের এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইসলামশিক্ষা শাখা নামে একটি স্বতন্ত্র শাখার উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ইসলামশিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং আরবি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।’ বস্তুত কোনো বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ও ডিগ্রি কলেজে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ বলতে কোনো শাখার অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, ইসলামশিক্ষা শাখা নামে নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সমকালে (দ্র: দৈনিক সমকাল, ২২-৫-২০১৩, পৃষ্ঠা ০৩)।

বস্তুত ইসলাম শিক্ষা শাখাটি অতীতে দেশের হাতেগোনা কিছু সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ছিল (যেমনÑ সরকারি কবি নজরুল কলেজ, যা বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স কলেজে রূপান্তরিত); কিন্তু কথিত ইসলামশিক্ষা শাখায় কোনো শিক্ষক না থাকায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয় নাÑ তা এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে। তাই বর্তমানে এই শাখার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কিন্তু তার পরও নতুনভাবে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ খোলা হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মনে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

আমাদের খোলামেলা বক্তব্য হলো, যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলোতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা চালু আছে এবং যেখানে প্রচুর শিক্ষার্থীও রয়েছে, সেখানেই ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে রাখা হয়নি। অথচ স্বাধীনতার আগে থেকেই একাদশ-দ্বাদশের সব শিক্ষার্থী নৈর্বাচনিক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি অধ্যয়ন করতে পারত। সুতরাং আসল স্থান থেকে বিষয়টি বাদ দিয়ে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ নামে একটি স্বতন্ত্র শাখার উল্লেখ করা জনগণকে ধোঁকা দেয়ারই শামিল বলে আমরা মনে করি।

বস্তুত এ নীতি যদি অব্যাহত থাকে তবে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকে ২০০০ নম্বরের ‘ইসলামশিক্ষা’ না থাকলে অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোতেও ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি অধ্যয়ন করা থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি শিক্ষার্থী না থাকায় হাজার হাজার শিক্ষকও চাকরি হারাবেন।

এনসিটিবির বিজ্ঞাপনে (২০১২) সচিব ব্রজগোপাল ভৌমিকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতেও ‘ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয় পাঠ্যপুস্তকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে চালু থাকবে। (দৈনিক ইনকিলাব, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ১২)। এটি যদি এনসিটিবির সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আমরা আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। কেননা আমরা সব সময়ই শিক্ষার সর্বস্তরে বিষয় উপযোগী ইসলামি বিষয় বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা মনে করি, একটি দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠনে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ধর্মশিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। সে জন্যই আইনস্টাইনের মতো এত বড় বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বলেছেন, ‘Science without religion is lame and religion without science is blind’-  - ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।’

বস্তুত ধর্মের বাঁধন শিথিল থাকার কারণেই আজ সর্বক্ষেত্র দুর্নীতির সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এহেন অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার আরও ব্যাপক হওয়া উচিত। এটি সব ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পৃথিবীর সব ধর্মই শান্তি, সম্প্রীতি ও ন্যায়নীতির কথা বলে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারসাজির কারণে যদি এই ধর্মশিক্ষাই বাদ দেয়া হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। অথচ আমরা সবাই ভালো প্রকৌশলী, ভালো চিকিৎসক, ভালো বিজ্ঞানী, ভালো ব্যবসায়ী, ভালো শিক্ষক, ভালো রাজনীতিবিদ, ভালো আইনজীবী, ভালো সাংবাদিক দেখতে চাইÑ এর জন্য প্রয়োজন ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার। কিন্তু আমরা যখন দেখছি শিক্ষাঙ্গনে ‘ইসলামশিক্ষা’ অধ্যয়নের সুযোগ বাড়ানোর পরিবর্তে বরং বাদ দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে, তখন শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে এই ভেবে যেÑ আমরা বুঝি নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনছি।

সুতরাং কোনো অবজ্ঞার কারণে যদি ইসলামশিক্ষা ও অন্যান্য ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়া হয়Ñ তবে যে অনাকাক্সিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সোনার মানুষ গড়তে হলে সুস্পষ্ট কয়েকটি দাবি বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছিÑ

 

আমাদের দাবি : ১) ২০১৩ সাল থেকে আগের মতো একাদশ ও দ্বাদশ মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব শাখায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইসলামশিক্ষা’ বহাল রাখতে হবে। অন্য ধর্মও আলাদাভাবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ২) ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে এনসিটিবি ঢাকা কর্তৃক আয়োজতি কর্মশালার সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রয়োজনীয় স্থানে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয় পুনঃস্থাপন করতে হবে। ৩) ১৭-১০-২০১২ তারিখে এনসিটিবি কর্তৃক জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তির অনুরূপ ২০১৩ সাল ও তৎপরবর্তীকালে একাদশ-দ্বাদশে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি থাকবে মর্মে নিশ্চিত করতে হবে। ৪) ১৯-৫-২০১৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রদত্ত এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক করতে হবে। ৫) সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষানীতি ২০১০-এর প্রাক-কথনের বক্তব্যের চেতনার আলোকে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি উন্নত জাতি ও সুনাগরিক গঠনে উপর্যুক্ত সুপারিশমালা সময়ের অনিবার্য দাবি।

লেখক : সভাপতি ও সেক্রেটারি

বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম
http://www.dailynayadiganta.com/?p=207849গত ১০-১০-২০১২ তারিখের দৈনিক সংগ্রাম, ১৫-১০-২০১২ তারিখের দৈনিক আমার দেশ ও ১৭-১০-২০১২ তারিখের নয়া দিগন্তে এবং বিভিন্ন সম্পাদকীয়তে ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ ঢাকার এনসিটিবিতে অনুষ্ঠিত এক কর্মশালার বরাত দিয়ে প্রকাশিত হয় যে, আগামী ২০১৩ সাল থেকে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীর যে নতুন কারিকুলাম চালু করা হচ্ছে; সেখানে বিজ্ঞান, মানবিক, ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি থাকছে না।

সে সময় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি বাদ দেয়ার খবর পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত হলে দেশবাসীর পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রতিবাদ আসতে থাকে। প্রতিবাদের মুখে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ডের (এনসিটিবি) সচিব ব্রজগোপাল ভৌমিকের পক্ষ থেকে ‘এ ধরনের অসত্য ও ভিত্তিহীন সংবাদে বিভ্রান্ত না হওয়ার অনুরোধ জানিয়ে’ একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। (দৈনিক সমকাল, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ৬)। একই তারিখে দৈনিক ইনকিলাবে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের পাশাপাশি সচিবের বরাত দিয়ে বলা হয় যে, ‘বর্তমানে মানবিক শাখায় নৈর্বাচনিক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ইসলামের ইতিহাস, ইসলামশিক্ষা ও আরবি অন্তর্ভুক্ত আছে।’ (সমকাল, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ৬)। দৈনিক ইনকিলাবেও সচিব ব্রজ গোপাল ভৌমিকের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘বর্তমানে একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ইসলামশিক্ষা বিষয় চালু আছে। এখানে ইসলামশিক্ষাকে বাদ দেয়ার প্রশ্নই আসে না বরং ইসলাম ধর্মের পরিপূর্ণতায় প্রকৃত মানুষ হিসেবে গড়ে তোলার নিমিত্তে পাঠ্যক্রম রচনা করা হয়েছে।’ (দৈনিক ইনকিলাব, ১৭-১০-২০১২, পৃ: ১২)।

শিক্ষানীতি ২০১০-এর প্রাক-কথনের শেষ প্যারায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লিখেছেনÑ ‘এই শিক্ষানীতির উল্লেখযোগ্য দিক হলো, এখানে ধর্ম, বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষাকে প্রাধান্য দেয়া হয়েছে।’ (দ্র: শিক্ষানীতি ২০১০, প্রাক-কথনের শেষ প্যারা)। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য থেকে মনে হয়েছে, ধর্মশিক্ষার ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আন্তরিক।


সেই তাগিদের অলোকেই দেখা যায়, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১২ ঢাকার এনসিটিবির শিক্ষা কারিকুলামে উল্লেখ ছিল, মানবিক শাখার আবশ্যিক বিষয়ের মধ্যে অন্যান্য বিষয়ের সাথে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টিও ছিল। এমনকি ১৩-১২-২০১২ তারিখ শিক্ষা মন্ত্রণালয় কর্তৃক ‘একাদশ ও দ্বাদশ শ্রেণীর উন্নয়নমূলক বিষয়ভিত্তিক শিক্ষাক্রম অনুমোদনের সভায়ও’ মানবিক শাখায় বিষয়ভিত্তিক আবশ্যিক বিষয় এবং ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি রাখা হয়েছিল। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চূড়ান্ত বিজ্ঞাপন থেকে তা বাদ দেয়া হয়েছে।

ইতোমধ্যে গত ১৯-৫-২০১৩ তারিখের দৈনিক ইত্তেফাকে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতে ২০১৩-১৪ শিক্ষাবর্ষে বিষয় কাঠামো প্রকাশ করা হয়েছে। বিজ্ঞপ্তিটি দেখে আমরা বিস্ময়ের সাথে লক্ষ করলাম, এনসিটিবি তার প্রতিশ্রুতি থেকে সরে গিয়ে উচ্চমাধ্যমিক মানবিক শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে না রেখে কেবল ঐচ্ছিক বিষয় (চতুর্থ বিষয়) হিসেবে রাখা হয়েছে। ইতঃপূর্বে এনসিটিবির পক্ষ থেকে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে যেখানে প্রকাশ করা হয়েছিল যে, উচ্চ মাধ্যমিক মানবিক শাখায় ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে থাকবে, কিন্তু কোনো রহস্যজনক কারণে অন্য সব বিষয় থাকলেও কেবল ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি বাদ দেয়া হয়েছে, তা আমাদের বোধগম্য নয়। এটি এনসিটিবির পক্ষ থেকে সুস্পষ্টভাবে প্রতিশ্রুতির লঙ্ঘন বলে আমরা মনে করি।

এখানে বিশেষভাবে উল্লেখ্য, ১৯-৫-২০১৩ তারিখের এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, ‘ইসলামশিক্ষা শাখা নামে একটি স্বতন্ত্র শাখার উল্লেখ করা হয়েছে। যেখানে ইসলামশিক্ষা, ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি এবং আরবি বিষয় অন্তর্ভুক্ত আছে।’ বস্তুত কোনো বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ও ডিগ্রি কলেজে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ বলতে কোনো শাখার অস্তিত্ব নেই। তা সত্ত্বেও বিভিন্ন পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারণা চালানো হচ্ছে, ইসলামশিক্ষা শাখা নামে নতুন বিভাগ চালু করা হয়েছে। এমনই একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে দৈনিক সমকালে (দ্র: দৈনিক সমকাল, ২২-৫-২০১৩, পৃষ্ঠা ০৩)।

বস্তুত ইসলাম শিক্ষা শাখাটি অতীতে দেশের হাতেগোনা কিছু সরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজে ছিল (যেমনÑ সরকারি কবি নজরুল কলেজ, যা বর্তমানে অনার্স-মাস্টার্স কলেজে রূপান্তরিত); কিন্তু কথিত ইসলামশিক্ষা শাখায় কোনো শিক্ষক না থাকায় কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হয় নাÑ তা এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে। তাই বর্তমানে এই শাখার কোনো অস্তিত্ব নেই বললেই চলে। কিন্তু তার পরও নতুনভাবে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ খোলা হয়েছে বলে প্রচারণা চালিয়ে মানুষের মনে নতুন করে বিভ্রান্তি সৃষ্টি করা হচ্ছে বলে আমরা মনে করি।

আমাদের খোলামেলা বক্তব্য হলো, যেখানে বাংলাদেশের প্রায় সব সরকারি-বেসরকারি ইন্টারমিডিয়েট কলেজগুলোতে বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষা ও মানবিক শাখা চালু আছে এবং যেখানে প্রচুর শিক্ষার্থীও রয়েছে, সেখানেই ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক হিসেবে রাখা হয়নি। অথচ স্বাধীনতার আগে থেকেই একাদশ-দ্বাদশের সব শিক্ষার্থী নৈর্বাচনিক ও ঐচ্ছিক বিষয় হিসেবে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি অধ্যয়ন করতে পারত। সুতরাং আসল স্থান থেকে বিষয়টি বাদ দিয়ে ‘ইসলামশিক্ষা শাখা’ নামে একটি স্বতন্ত্র শাখার উল্লেখ করা জনগণকে ধোঁকা দেয়ারই শামিল বলে আমরা মনে করি।

বস্তুত এ নীতি যদি অব্যাহত থাকে তবে এর সুদূরপ্রসারী নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমরা মনে করি। কারণ উচ্চ মাধ্যমিকে ২০০০ নম্বরের ‘ইসলামশিক্ষা’ না থাকলে অনার্স-মাস্টার্স কলেজগুলোতেও ‘ইসলামিক স্টাডিজ’ বিষয়ে ভর্তি হতে পারবে না। ফলে শিক্ষার্থীরা যেমন ‘ইসলাম শিক্ষা’ বিষয়টি অধ্যয়ন করা থেকে বঞ্চিত হবে, তেমনি শিক্ষার্থী না থাকায় হাজার হাজার শিক্ষকও চাকরি হারাবেন।

এনসিটিবির বিজ্ঞাপনে (২০১২) সচিব ব্রজগোপাল ভৌমিকের বরাত দিয়ে বলা হয়েছিল, ‘জাতীয় শিক্ষানীতির আলোকে ২০১৩ সাল থেকে নতুন শিক্ষাক্রম অনুযায়ী একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণীতেও ‘ইসলাম ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা’ বিষয় পাঠ্যপুস্তকে আবশ্যিক বিষয় হিসেবে চালু থাকবে। (দৈনিক ইনকিলাব, ১৭-১০-২০১২, পৃষ্ঠা ১২)। এটি যদি এনসিটিবির সিদ্ধান্ত হয়ে থাকে, তবে আমরা আন্তরিকভাবে অভিনন্দন জানাই। কেননা আমরা সব সময়ই শিক্ষার সর্বস্তরে বিষয় উপযোগী ইসলামি বিষয় বাধ্যতামূলক করার দাবি জানিয়ে আসছি। আমরা মনে করি, একটি দুর্নীতিমুক্ত জাতি গঠনে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার কোনো বিকল্প নেই। ধর্মশিক্ষা ছাড়া কোনো শিক্ষাই পূর্ণাঙ্গ হতে পারে না। সে জন্যই আইনস্টাইনের মতো এত বড় বিজ্ঞানী ও দার্শনিক বলেছেন, ‘Science without religion is lame and religion without science is blind’- - ‘ধর্ম ছাড়া বিজ্ঞান পঙ্গু আর বিজ্ঞান ছাড়া ধর্ম অন্ধ।’

বস্তুত ধর্মের বাঁধন শিথিল থাকার কারণেই আজ সর্বক্ষেত্র দুর্নীতির সয়লাব বয়ে যাচ্ছে। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ইভটিজিংয়ের মতো ঘটনা ভয়াবহ রূপ নিয়েছে। এহেন অবস্থায় প্রাতিষ্ঠানিকভাবে ধর্ম ও নৈতিক শিক্ষার প্রসার আরও ব্যাপক হওয়া উচিত। এটি সব ধর্মের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পৃথিবীর সব ধর্মই শান্তি, সম্প্রীতি ও ন্যায়নীতির কথা বলে। কিন্তু কোনো এক অদৃশ্য শক্তির কারসাজির কারণে যদি এই ধর্মশিক্ষাই বাদ দেয়া হয়, তাহলে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর নৈতিক মূল্যবোধসম্পন্ন করে গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। অথচ আমরা সবাই ভালো প্রকৌশলী, ভালো চিকিৎসক, ভালো বিজ্ঞানী, ভালো ব্যবসায়ী, ভালো শিক্ষক, ভালো রাজনীতিবিদ, ভালো আইনজীবী, ভালো সাংবাদিক দেখতে চাইÑ এর জন্য প্রয়োজন ধর্মীয়-নৈতিক শিক্ষার। কিন্তু আমরা যখন দেখছি শিক্ষাঙ্গনে ‘ইসলামশিক্ষা’ অধ্যয়নের সুযোগ বাড়ানোর পরিবর্তে বরং বাদ দেয়ার পরিকল্পনা হচ্ছে, তখন শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের অন্তরাত্মা কেঁপে ওঠে এই ভেবে যেÑ আমরা বুঝি নিজেরাই নিজেদের পতন ডেকে আনছি।

সুতরাং কোনো অবজ্ঞার কারণে যদি ইসলামশিক্ষা ও অন্যান্য ধর্মশিক্ষা বাদ দেয়া হয়Ñ তবে যে অনাকাক্সিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে, তা সামাল দেয়া কারো পক্ষে সম্ভব হবে না। তাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলায় সোনার মানুষ গড়তে হলে সুস্পষ্ট কয়েকটি দাবি বিবেচনার জন্য উপস্থাপন করছিÑ



আমাদের দাবি : ১) ২০১৩ সাল থেকে আগের মতো একাদশ ও দ্বাদশ মানবিক, বিজ্ঞান, ব্যবসায় শিক্ষাসহ সব শাখায় মুসলিম শিক্ষার্থীদের জন্য ‘ইসলামশিক্ষা’ বহাল রাখতে হবে। অন্য ধর্মও আলাদাভাবে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করা যেতে পারে। ২) ১৯ সেপ্টেম্বর ২০১২ তারিখে এনসিটিবি ঢাকা কর্তৃক আয়োজতি কর্মশালার সিদ্ধান্ত বাতিল করে প্রয়োজনীয় স্থানে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয় পুনঃস্থাপন করতে হবে। ৩) ১৭-১০-২০১২ তারিখে এনসিটিবি কর্তৃক জাতীয় পত্রপত্রিকায় প্রদত্ত বিজ্ঞপ্তির অনুরূপ ২০১৩ সাল ও তৎপরবর্তীকালে একাদশ-দ্বাদশে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি থাকবে মর্মে নিশ্চিত করতে হবে। ৪) ১৯-৫-২০১৩ তারিখে দৈনিক ইত্তেফাকে প্রদত্ত এনসিটিবির বিজ্ঞপ্তি সংশোধন করে ‘ইসলামশিক্ষা’ বিষয়টি আবশ্যিক করতে হবে। ৫) সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর শিক্ষানীতি ২০১০-এর প্রাক-কথনের বক্তব্যের চেতনার আলোকে শিক্ষার সর্বস্তরে ধর্মীয় শিক্ষার ওপর গুরুত্ব দিতে হবে।

একটি উন্নত জাতি ও সুনাগরিক গঠনে উপর্যুক্ত সুপারিশমালা সময়ের অনিবার্য দাবি।

লেখক : সভাপতি ও সেক্রেটারি

বাংলাদেশ ইসলামিক স্টাডিজ ফোরাম
http://www.dailynayadiganta.com/?p=207849 



রবিবার, ২ জুন, ২০১৩

আসিফ মহিউদ্দিন ও অনন্য আজাদের মদ খাওয়ার পার্টি

গ্রেফতারকৃত ধর্মব্যাঙ্গকারী ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন অরফে খাসী এবং হুমায়ুন আজাদের ছেলে অনন্য আজাদের রঙ্গলীলা ও মদ খাওয়ার পার্টির ছবিবহুল একটি নোট :) 
 

রুচির সাথে চুচির খেলা আমি খাসী দুষ্টূ ম্যালা


আমরা সকলে এক হয়েছিলাম আবিদা রুচি আপার সাথে। আমাদের সকলকে ভালবাসায় শিক্ত করেছিলেন আপুনি- আজ আমাদের অনেক দু্র্দিন- কিন্তু রবি ঠাকুর বলেছেন

"এ দিনতো দিন নয় আরো দিন আছে-
এ দিনকে লইবো আমি সেইদিনেরও কাছে"
এ পোষ্ট শুধু রুচি আপার জন্য

- উই মিস ইউ আপুনি- আবার দেখা হবে- সুরা হবে সাকি হবে ভালবাসা হবে!!


" তুমি ছুঁয়ে দিলেই বৃত্ত হবে। কেন্দ্র হবে তুমি। আর আমি হবো বৃত্তাবর্ত।"



"বুড়ো হয়ে গেছি বেশ,কিছুটা শিথিল; বুঝতে পারিনি তাই
তোমার একুশতম জন্মদিনে,তিলোত্তমা,কী নিয়ে যাই ।
তুমি ঘাসফুল,স্বনলতা,রোদ,পৌষের তুষের আগুন,
কোকিলের ডাক,কৃষ্ণচূড়া,রক্তজবা,নদী,রঙিন ফাগুন।"



"এ কোন মধুর শরাব দিলে আল আরাবী সাকী নেশায় হলাম দীওয়ানা যে, রঙ্গিন হল' আঁখি।।"


"নুরু, পুশি, আয়েশা, শফি সবাই এসেছে
আম বাগিচার তলায় যেন তারা হেসেছে।
বোশেখ মাসের এই দুপুরে নাইকো কারো ঘুম।"


"শুধু তোমাকে একবার ছোঁব,
শুধু একবার পেতে চাই অমৃত আস্বাদ।"


"আঁখিতে আঁখি মিলিয়ে মদিরা পান করে যাই।
তাকে বসিয়ে পাশে মদিরা পান করে যাই।।
এই কারণে পানশালায় আঁধার ছেয়ে আছে।
ঘর জ্বালিয়ে হেথা মদিরা পান করে যাই।।"



"বন্ধু, আজকে দোদুল্যমান পৃথ্বী
আমরা গঠন করব নতুন ভিত্তি;
তারই সুত্রপাতকে করেছি সাধন
হে সাথী, আজকে রক্তিম অভিবাদন।।"



"তোমরা এসেছ, ভেঙেছ অন্ধকার-
তোমরা এসেছ, ভয় করি নাকো আর।
পায়ের স্পর্শে মেঘ কেটে যাবে, উজ্জ্বল রোদ্দুর
ছড়িয়ে পড়বে বহুদুর-বহুদূর
তোমরা এসেছ, জেনো এইবার নির্ভয় কলকাতা-
অত্যাচারের হাত থেকে জানি তোমরা মুক্তিদাতা।"
by আসল পুরুষ (Notes) on Sunday, June 2, 2013 at 7:26pm